Posts

Showing posts from 2024

হারিয়ে খুঁজি তোমায়; তোমার মত

হৈম ন্তী গল্পে রবীন্দ্রনাথ কথকের মুখে বলেছিলেন, “দানের মন্ত্রে স্ত্রী-কে যেটুকু পাওয়া যায়, তাহাতে সংসার চলে কিন্তু পনেরো আনা বাকি থেকে যায়”। গল্পকার এই পর্যন্ত বলেই শেষ করেছিলেন এ প্রসঙ্গ, এর চেয়ে ফেনিয়ে বলতে হয়ত তাঁর রুচিতে বেধেছিল, অথবা তিনি ভরসা করেছিলেন, স্বজাতির ওপর, তাদের বোধের ওপর৷ তাঁর এই ভরসা যে কতখানি ভিত্তিহীন ছিল, তা যখন তিনি বুঝেছিলেন, তখন অনেকখানি দেরি হয়ে গিয়েছিল। ঠাকুর পদবীর জোরে(?) যখন মানুষ রবীন্দ্রনাথ দেবতা হয়ে উঠলেন, তখন আর কিছুতেই তাঁর মানুষ হবার উপায় রইল না। তিনি নিজেই লিখেছিলেন, “ধর্মের বেশে মোহ এসে যারে ধরে, অন্ধ সেজন মারে আর শুধু মরে”— এই লেখা তাঁর নিজের ক্ষেত্রেই এতখানি সার্থক হয়ে উঠবে জানলে হয়ত একটা প্রতিকারের বা অন্তত পালানোর পথ ভেবে রাখতেন। নজরুল নিজেকে “হুজুগের কবি” বলে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিলেন, সেরকমই কোন কাব্যিক উপায় হয়ত রবীন্দ্রনাথও জোটাতেন। না হলে “দেখলে গতিক মন্দ” ডুবতেন অগাধ জলে, তেমনি করেই কাটিয়ে দিতেন, “লুকোচুরির ছলে”৷ রবীন্দ্রনাথের মানুষী অস্তিত্বের বিলোপসাধনের সঙ্গে সঙ্গে যে বিষয়টি মারক হয়ে ওঠে, তা হল তাঁর এবং তাঁর সৃষ্টির ভুল তথা অক্ষম অনুবাদ। রব...

দেবীপক্ষে; দেবীর পক্ষে

শাক্ত কবি যখন আবেগতাড়িত হয়ে হিমালয়-জায়ার বয়ানে লিখলেন, "এবার আমার উপায় এলে আর উমা পাঠাব না"— মনের গভীরে তিনি জানতেন এ কেবলই কথার কথা। বাস্তবে, সামাজিক চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে উমার পিতৃগৃহে দীর্ঘ প্রবাস সম্ভবপর হবে না কোনমতেই। তাই দেবীপক্ষের শুরুতে যে প্রতিরোধ অলঙ্ঘ্য বলে মনে হয়েছিল, সে প্রতিরোধ দুর্বলতর হতে হতে দিনের শেষে ঘাড় ধাক্কার রূপ পরিগ্রহ করে। "যেও না নবমী নিশি" — মর্মে মেনকা যতই কাঁদাকাটা করুন না কেন, তিনি নিজেও এ কথা জানতেন, যে নবমীর রাত পোহালে যদি তার মেয়ে শ্বশুরবাড়িমুখো না হয়, তবে তার মেয়ের বধ করা সমস্ত অসুর সামাজিকতার অব্যর্থ বরে বেঁচে ওঠে তার চারপাশে বর্বর নৃত্য আরম্ভ করবে এবং তার মেয়ে দশ হাতেও সমাজের পাঁচ কান বন্ধ করতে পারবে না। বোধনের বাজনার গভীরে যে বিসর্জনের প্রস্তুতি চলে, এই রূঢ় সত্যকেই কোমলতার কিংখাবে ঢাকতেই এত কথা, এত গান, এত গল্প আর এত আয়োজন। এত মলাটের প্রয়োজন এই কারণেই। দিনশেষের গলা ধাক্কায় মেয়ের ঘাড় ভেঙে যায় যাক ক্ষতি নেই, কিন্তু তার হৃদয় যেন অক্ষত থাকে। ভগ্নহৃদয়ে সে শ্বশুরবাড়ী গেলে সেখানে বাপের বাড়ীর নিন্দে হবে। এই দ্বি-চা...