চড়ুকে পিঠ (পর্ব ৩) মন্দারমণি

মন্দার এবং মণি-র মণিকাঞ্চন যোগ ঘটলেই আরামপ্রিয় বাঙালির ফুর্তির প্রাণ ব্রিগেডের ময়দান হয়ে যায়। 'উতলা পরাণে বোতল মুখে, মাছভাজা সনে খাইব সুখে'— এটাই যেন মন্দারমণি-মুখী পর্যটকদের এক ও অদ্বিতীয় শ্লোগান। এর বাইরে আরও কোন মণি-মুক্তো মন্দারে চাপা পড়ে আছে কি না, সেটা খুঁজতেই সকাল সকাল বেলঘরিয়া বাস ডিপো থেকে দীঘাগামী বাসে (টিকিট মূল্য ১৪৫ টাকা) চেপে বসেছিলাম। দারুণ ঝাঁকুনি আর নিদারুণ গরম (কেননা বাসটির শীতাতপ বৈশাখী অনাসৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল) ঘন্টাচারেক সইবার পর চাউলখোলায় নেমে চাউল ছাড়াই খোলা হাওয়া খেলাম। তারপর অটো-যোগে ১৫০ টাকা গুণে দিয়ে পৌঁছলাম অস্থায়ী বাসায়। নাম 'মনসুন রিসর্ট'। বরাতে না থাকলেও রিসর্টে মনসুন দেখে কিছুটা আশার সঞ্চার হল। দু-পাশে সারিবাঁধা কটেজ-সদৃশ ঘর। মাঝের রাস্তা গিয়ে মিলেছে একটা সাঁকোতে, যা পার হলেই অগস্ত্য যাত্রা থুড়ি সমুদ্রযাত্রার পথ সুগম হয়। বানরসেনা সমুদ্রে যে সেতু বেঁধেছিলেন এবং যা নিয়ে মধুকবি মধুহীনভাবে ঠুকেছিলেন সমুদ্রকে, এই সাঁকো তারই অংশবিশেষ কি না, বহু চেষ্টা করেও জানা যায়নি। সমুদ্রতটের ওটুকু অংশ রিসর্টের বাসিন্দা-দের জন্যেই বিশেষরূপে সুগম; ফলে ভিড়জনিত হুজ্জুতি এড়াতে চাইলে অবশ্যই এটি একটি লোভনীয় ব্যাপার। স্নানের দায়িত্ব সমুদ্রের, আর বিবাহিত স্বামীর মত রিসর্ট আপনার থাকার সঙ্গে খাওয়ার দায়িত্ব নিতেও রাজি, তবে অবশ্যই কাঞ্চনমূল্যের বিনিময়ে। খাবার সুস্বাদু এবং অপর্যাপ্ত। ফলে পেটুক হলেও পেটে টান পড়ার আশঙ্কা নেই এই বাজারেও। 
 
সমুদ্রের ঢেউ অবিশ্রান্ত অগণ্য হাতের ইশারায় বারবার ডাক দিয়ে যায়। কোন অলক্ষ্যের প্রতি যে তার নির্দেশ, তা জানা যায় না। বিরাট সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ক্ষুদ্রতা আর নগণ্যতা পেরিয়ে টিঁকে থাকা, বেঁচে থাকায় দারুণ গর্ব হয়। মনে পড়ে কবির সেই উচ্চারণ— "তবুও তো প্যাঁচা জাগে, গলিত স্থবির ব্যাং আরও দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে, আর-একটি প্রভাতের ইশারায়, অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে"। 

কাজের কথা- রিসর্টের থাকা এবং খাওয়া (৪ বেলা) মিলে জনপ্রতি ও দিনপ্রতি খরচ ১৫০০ টাকা। মন্দারমণি-তে থাকার জায়গার অভাব নেই সমুদ্রতটের বালির মতই। তবু লেখকের ভরণপোষণ যারা করেছেন, তাদের ফোন নম্বর দেওয়া রইল। চাইলে নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করতে পারেন। 

মনসুন রিসর্ট- 9832587055/9903587016
অটো- +916297634621
বাস- +919775674695 (বিমান নাথ)

Comments

Popular posts from this blog

চড়ুকে পিঠ (পর্ব-৪)— ত্রিপুর রাজার বিনা নিমন্ত্রণে

হারিয়ে খুঁজি তোমায়; তোমার মত

বাস করিনি কোথাও