Posts

Showing posts from August, 2020

পান; খাওয়া নয়, করা

  পান- খাওয়া নয়, করা অমিতায়ু চক্রবর্তী চর্ব্য চুষ্য লেহ্য পেয়- এই ফুল কোর্স আহারের পাহাড়ের অন্তিম শিখরটি হল পেয় অর্থাৎ পানীয়, যা না থাকলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে নিদারুণ কষ্ট হয়। আধুনিক বাঙালি সময়ের স্বল্পতায় জল দিয়েই ভোজনকালীন পানের ব্যাপারটা সেরে ফেলতে অভ্যস্ত হলেও নন কর্পোরেট মধ্যযুগে ব্যাপারটি এমন ছিল না। যদিও বিদেশী পর্যটক লিখেছেন যে মূলত ভিক্ষুক শ্রেণীর মধ্যেই এই পানীয় নিয়ে নানারকম ফ্যান্টাসি বা রকমারি পানীয়ের রেসিপি জন্ম ও বিকাশলাভ করেছিল। তবে সে কারণে আধুনিক পানবিলাসীরা হীনমন্যতায় ভুগবেন না। কেননা সোমরস জাতীয় পানীয় যা আজকের উৎকৃষ্টতর WINE, তা সমাজের ওপরতলারই অংশ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলেই ভরসা। পর্যটক লিখছেন, সেকালে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় রকম শরবৎ বা পানার উল্লেখ তিনি পেয়েছেন এই বঙ্গদেশে। সেগুলির নাম যথাক্রমে- ১. চোচ পান ২. মোচ পান ৩. কুলক পান ৪. অশ্বত্থ পান ৫. পরুসক পান ৬. খর্জুর পান নামগুলো উত্তরাধুনিক যুগের পক্ষে অন্যায় রকম খটমট, তাই পাঠকের সুবিধার্থে খোলসা করে বলা প্রয়োজন। খর্জুর পান বলতে খেজুর রস-কে বোঝানো হয়েছে, কুলক পান সম্ভবত কাঁকুড়ের শরবৎ, কুলের পানার পক্ষে

বাঙালি- So Fishy

  বাঙালি; so fishy অমিতায়ু চক্রবর্তী। কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। শুধু ‘কথায় বলে’, সেই কারণেই তাকে ফেলনা ভাবলে চরম বোকামি করা হবে। বাঙালি জীবনের সঙ্গে মাছ ও ভাতের সম্পর্ক এমনই প্রগাঢ় যে তাকে বাদ দিয়ে বাঙালি জীবন ও যাপন অসার না হলেও নেহাতই অস্থিচর্মসার। বাঙালি মনন থেকে আঁশটে গন্ধ না পাওয়া গেলে তাকে বড্ড বেমানান মনে হয় যেন। বাঙালি জীবনে ও আহারে মাছের এমন আগ্রাসনের বেশ কয়েকটি কারণ সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। প্রথমটি অবশ্যই ভৌগোলিক। বাংলাদেশ (অখন্ড, অধুনা নহে) নদীমাতৃক হবার কারণে সেখানে জল ও জলচর মাছের ওপরে বাঙালি যাপনের নির্ভরশীল হয়ে পড়া অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ঘটনা। এছাড়াও অর্থনৈতিক দিক থেকে এই দেশ কৃষিনির্ভর হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষকে জীবিকার কারণেই নদীর কাছাকাছি বাস করতে হত। ফলে, মাছের সঙ্গে মোলাকাত না হয়ে তার যায় না। তাই অবিলম্বে জল ছেড়ে জাল ও তার অনতিপরেই থালায় আবির্ভূত হতে সময় লাগেনি তাদের। আর শুধু নদী নয়, পুকুর খাল বিলের সঙ্গে সঙ্গে চাষের খেতে বর্ষার জমা জলেও জন্ম নিত নামগোত্রহীন বহু মাছ, যারা মৎসকূলে কুলীন না হলেও জনপ্রিয় ছিল সাধারণ জীবনে তথা রান্নাঘরে। বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ যারা,

রবীন্দ্রনাথ; অ্যান্টিক না আজও প্রাসঙ্গিক!

  রবীন্দ্রনাথ; অ্যান্টিক না আজও প্রাসঙ্গিক! অমিতায়ু চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর উত্তরকালীন সাহিত্য প্রসঙ্গে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত মন্তব্য করেছিলেন, “তাঁর এই অসীম সাম্রাজ্যের অনেক জমি জোতদারের দখলে এসেছে; এবং তাদের মধ্যে যারা পরিশ্রমী, তারা নিজের নিজের এলাকার শস্যের পরিমাণ বাড়িয়েছে মাত্র। ফসলের জাত বদলাতে পারেনি” (কুলায় ও কালপুরুষ)। তাঁর এই মন্তব্যের আলোকেই রবীন্দ্রনাথ বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে কতখানি প্রাসঙ্গিক, তা বিচার করে দেখা যেতে পারে। নিতান্ত বস্তুবাদী তথা মোটা দাগের এই আণবিক যুগে দাঁড়িয়ে ধরাছোঁয়া যায় না এমন কিছু নিয়ে আলাপ আলোচনাকে অনেকেই বাতুলতা অথবা সময় নষ্ট বলে মনে করেন। রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক ভাবনা বা পরম’কে ছুঁতে চাওয়ার বোধিকে স্পর্শ করতে যে মানসিক স্থৈর্য্য প্রয়োজন, তাকে অর্জন করার সময় বোধকরি হয় না আজকের ইঁদুর দৌড়ের শেষের ক্লান্ত বিকেলে। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে। ‘অন্ধকার রুদ্ধগৃহে একেলা বসিয়া’ রবিঠাকুর মেঘদূত পড়েছিলেন, আমরা হলে হয়ত ফেসবুক দেখতাম। তাঁর সঙ্গে আমাদের এই মূলগত তফাতটুকুকে বাদ দিলে, শিক্ষায়, বোধে, রুচিতে এবং আধুনিকতায় তাঁকে আমাদের তুলনায় খুব এ

অনুবাদের আলোকে সুমনের গান (নির্বাচিত ৫টি)

  অনুবাদের আলোয় সুমনের গান (নির্বাচিত ৫টি) অমিতায়ু চক্রবর্তী। সাহিত্যের আধুনিক ধারণা অনুসারে গানকে সাহিত্যের অঙ্গ হিসেবে ভেবে নিতে একটু অস্বস্তি হলেও সুরবর্জিত গান যে কবিতা বৈ আর কিছু নয়, তা অস্বীকার করার উপায় সম্ভবত নেই। আর সেই কবিতা যে সাহিত্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা এ বিষয়েও আজ আর কোন সংশয়ের অবকাশ নেই। প্রাচীন কাল থেকেই সাহিত্যের বিশ্বজনীনতার প্রয়োজনে বারবার এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে সাহিত্য। বলা যায়, অনুবাদের মাধ্যমেই সাহিত্য বিশেষ থেকে নির্বিশেষের হয়ে উঠেছে। আর সেই কারণেই সাহিত্যের অনুষঙ্গ হিসেবে গানের অনুবাদ নিয়ে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তার লিরিকই প্রাধান্য পাবে, সুরের প্রসঙ্গ এলেও তা আসবে গৌণরূপে। কবীর সুমন ১৯৯০ এর দশক থেকে বাংলা জীবনমুখী গানের ধারায় পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিপুল প্রভাব নিয়ে আসেন। দীর্ঘদিন চাকরি সূত্রে পাশ্চাত্যে থাকা ও সমসাময়িক বিভিন্ন সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য তাকে ও তার চিন্তাকে সমৃদ্ধ করেছিল। সেই উদার চিন্তা ও তার অধীত সাঙ্গীতিক জ্ঞানকে কাজ লাগিয়ে সুমন একটি নতুন ধারায় গান লিখতে ও গাইতে আরম্ভ করেন। পাশ্চাত্য ধারার সঙ্গীত ও তাতে জীবন ও