Posts

Showing posts from 2022

অকাল-বোধনের প্রথম সকাল

দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে বাঙালির যাপনের সঙ্গে সবচেয়ে সম্পৃক্ত যে উৎসব, তা দুর্গাপূজা। এতে শুধু এবং শুধুমাত্র বাঙালিরই একচেটিয়া অধিকার। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত 'জাতিস্মর' ছায়াছবির শেষাংশেও দেখা যায় কুলপতি নিদান দিচ্ছেন, দুর্গাপূজা বাঙালির উৎসব, অবাঙালি 'ম্লেচ্ছ'র তাতে অধিকার নেই। সমাজপতির নির্দেশে তাই 'যথেচ্ছাচার'-এ প্রাণ দিতে হয় অ্যান্টনি কবিয়ালের স্ত্রী সৌদামিনী-কে। অতঃপর প্রশ্ন আসে, নদী থুড়ি দুর্গাপূজা, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? এ প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে অধুনা বাংলাদেশের রাজশাহী-তে। ভারত-ভাগ (১৯৪৭) হতে তখনও ৩৬৫ বছর বাকি আর বাংলাদেশের জন্মলগ্ন (১৯৭১) আসতে বাকি আরও ২৪ বছর।  তখন এ-পার আর ওপারের মধ্যে কেবল ভৌগোলিক দূরত্বই ছিল, পাসপোর্ট-ভিসা নবতর সংযোজন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে সৃষ্টির আদিতে কৃষ্ণ বৈকুন্ঠের মহারাসমন্ডলে প্রথম দুর্গাপূজা করেন। এরপর মধু ও কৈটভ অসুরের ভয়ে দ্বিতীয়বার দুর্গাপূজা করেন প্রজাপতি ব্রহ্মা, তৃতীয়বারে ত্রিপুর অসুর দমনের কালে দেবী পূজিতা হন শূলপাণি শিবের দ্বারা, চতুর্থবার দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষীকে হারিয়ে ইন্দ্র দেবীর পূজা করেন। দেবীভাগবতপু

রবি-কে যাবে না পাওয়া, 'কবি'র চরিতে

ছিন্নপত্রের একেবারে শুরুতে রবীন্দ্রনাথের যে লেখা ভূমিকারূপে সংযুক্ত এবং প্রকাশিত, তাতে তিনি লিখছেন— "যখন মনে জানি আমার পাঠকেরা আমাকে ভালো করে জানে না, আমার অনেক কথাই তারা ঠিকটি বুঝবে না এবং নম্রভাবে বোঝার চেষ্টাও করবে না, এবং যেটুকু তাদের নিজের মানসিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলবে না সেটুকু আমার ওপরে বিশ্বাস স্থাপন করে গ্রহণ করবে না— তখন মনের ভাবগুলি তেমন সহজে ভাষায় প্রবাহিত হতে চায় না এবং যতটুকু প্রকাশ হয় তার মধ্যে অনেকখানি ছদ্মবেশ থেকে যায়। এর থেকেই বেশ বুঝতে পারি, আমাদের সবচেয়ে যা শ্রেষ্ঠ প্রকাশ সে আমরা কাউকে নিজের ইচ্ছা-অনুসারে দিতে পারি নে। আমাদের ভিতরে সব চেয়ে যা গভীরতম উচ্চতম অন্তরতম সে আমাদের আয়ত্তের অতীত; তা আমাদের দান-বিক্রয়ের ক্ষমতা নেই.….।" রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে সাহিত্যের ছদ্মবেশের আড়ালে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ তার পাঠকের কাছে বহুলাংশেই অধরা। তার জন্মের ১৬১ বছর এবং মৃত্যুর ৮১ বছর পরেও তাকে নিয়ে গবেষণা আলোচনা বিশ্লেষণ শেষ হয়নি সারা বিশ্বের। তবু যদি প্রশ্ন আসে এত আলোচনা পর্যালোচনার শেষে আদপে কতটুকু চিনেছি তাকে? ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কতটুকুই বা

শহুরে অন্ধকার না কি নাগরিকার অন্তরাল? যথা দেখিতং তথা লিখিতং; রাতের কলকাতা

হেমেন রায় লিখেছিলেন, "জাল জুয়াচুরি মিথ্যেকথা, এই তিন নিয়ে কলকাতা। লেখক স্বনামখ্যাত হয়েও স্বনামে এমন কথা লেখার সাহস তিনি দেখাননি। আড়াল আবডালের প্রসঙ্গ এলেই অবধারিতভাবে যে চরিত্রটি আমাদের চোখের সামনে এসে পড়ে তিনি রামায়ণ (কু)খ্যাত ইন্দ্রজিত। যিনি আরেকটু হলেই প্রিভিলেজড দেবতাপক্ষকে ল্যাজেগোবরে করে দিতেন, নেহাত দেবতাদের বকলমে বাল্মিকী এসে পরিত্রাণ করলেন। নাগরিক সমাজে বাস করে এমন চোখা মন্তব্য অন্তত স্বনামে করলে তাকেও যে ল্যাজেগোবরে হতে হবে, এই আশঙ্কাতেই সম্ভবত হেমেন রায় ছদ্মনাম নেন মেঘনাদ গুপ্ত। গোপনীয়তাটা লেখক পদবিতেও রক্ষা করেছেন অসামান্য মুন্সিয়ানায়। যদিও ব্যোমকেশ থুড়ি শরদিন্দু-র মতে বাঙালিরা ছদ্মনাম নিলেই পদবিতে গুপ্ত লেখে। সেদিক থেকে দেখলে হেমেনবাবু এ-যুগে জন্মালে সেরা বাঙালির নমিনেশন পেতেন। রবীন্দ্রনাথ ঘুম ভেঙে যতই দেখুন, কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই; বাস্তবে তেমনটা হয়নি। রবীন্দ্রনাথকে মিথ্যে করে সুমন গাইলেন, " পালটায় মন, পালটায় চারপাশ, রাস্তায় আসে নতুন রুটের বাস"। এই সূত্র ধরেই কলকাতাও পাল্টেছে। পাল্টেছে তার নৈশ যাপন। হেমেনবাবুকে হারিয়েছি আমরা, কলকাতা হারিয়েছে রাজধানীর মর্যাদ

চড়ুকে পিঠ (পর্ব ৩) মন্দারমণি

Image
মন্দার এবং মণি-র মণিকাঞ্চন যোগ ঘটলেই আরামপ্রিয় বাঙালির ফুর্তির প্রাণ ব্রিগেডের ময়দান হয়ে যায়। 'উতলা পরাণে বোতল মুখে, মাছভাজা সনে খাইব সুখে'— এটাই যেন মন্দারমণি-মুখী পর্যটকদের এক ও অদ্বিতীয় শ্লোগান। এর বাইরে আরও কোন মণি-মুক্তো মন্দারে চাপা পড়ে আছে কি না, সেটা খুঁজতেই সকাল সকাল বেলঘরিয়া বাস ডিপো থেকে দীঘাগামী বাসে (টিকিট মূল্য ১৪৫ টাকা) চেপে বসেছিলাম। দারুণ ঝাঁকুনি আর নিদারুণ গরম (কেননা বাসটির শীতাতপ বৈশাখী অনাসৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছিল) ঘন্টাচারেক সইবার পর চাউলখোলায় নেমে চাউল ছাড়াই খোলা হাওয়া খেলাম। তারপর অটো-যোগে ১৫০ টাকা গুণে দিয়ে পৌঁছলাম অস্থায়ী বাসায়। নাম 'মনসুন রিসর্ট'। বরাতে না থাকলেও রিসর্টে মনসুন দেখে কিছুটা আশার সঞ্চার হল। দু-পাশে সারিবাঁধা কটেজ-সদৃশ ঘর। মাঝের রাস্তা গিয়ে মিলেছে একটা সাঁকোতে, যা পার হলেই অগস্ত্য যাত্রা থুড়ি সমুদ্রযাত্রার পথ সুগম হয়। বানরসেনা সমুদ্রে যে সেতু বেঁধেছিলেন এবং যা নিয়ে মধুকবি মধুহীনভাবে ঠুকেছিলেন সমুদ্রকে, এই সাঁকো তারই অংশবিশেষ কি না, বহু চেষ্টা করেও জানা যায়নি। সমুদ্রতটের ওটুকু অংশ রিসর্টের বাসিন্দা-দের জন্যেই বিশেষরূপে সুগম;