Posts

Showing posts from 2023

বাস করিনি কোথাও

শাস্ত্রকারেরা যতই দেবভাষায় স্বর্গ কাঁপিয়ে হুঙ্কার করুন যে, এ জীবন কিছুই নয়, ক্ষণকালের মায়ামাত্র— তারা নিজেরাও একথা ভালই বুঝতেন যে, এই মায়ার ছায়ার বাইরে বেরিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। আর সেই ছায়ায় বসবাস করতে যা কিছু, যত কিছু প্রয়োজন হয়— তার আয়োজন করতেই এ জীবনের নাভিশ্বাস উঠে যেতে পারে কুলকুণ্ডলীনী ছেড়ে একেবারে সহস্রারে।  এই অসীম প্রয়োজনের তালিকার একেবারে গোড়ার দিকের তিনটি জিনিস— অন্ন বস্ত্র ও বাসস্থান। প্রথম দুটোর দায়িত্ব নেওয়া বা অন্যের ওপরে শাস্ত্রমতে চাপিয়ে দেবার সামাজিক বিধান হয়ত রয়েছে কিন্তু গোল বাধে তৃতীয়টিকে নিয়েই।  জন্মসূত্রে বা বলা ভালো উত্তরাধিকার সূত্রে যারা বাসস্থানটি অন্ন-বস্ত্রের সঙ্গে মুফতে পেয়ে যান,  তারা স্বভাবতই যাপনের পক্ষে অতি প্রয়োজনীয় এই বস্তুটির সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেন না। আর যাদের ভাগ্যে ভিক্ষের দানে অচল পয়সা, অর্থাৎ যারা পুরুষানুক্রমে বাস্তুহারা, তাদের কাছে দুঃখের, গ্লানির, যন্ত্রণার চক্রবৃদ্ধি সুদে তার আসল দাম বেড়ে হয় অমূল্যের সামিল। সেসব মানুষের আজীবনের অপ্রাপ্তি হতাশার পৌনঃপুনিকে জারিত হয়ে জন্ম নেয় নানা বিকৃত ভাবনা। জন্মের পর থেকে

চড়ুকে পিঠ (পর্ব-৪)— ত্রিপুর রাজার বিনা নিমন্ত্রণে

Image
  দমদম বিমানবন্দর। জাতিগত ঐতিহ্য ধূলিসাৎ করে নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগে, মায় যার জোরে আমি উড়ব (না, সে আমার রাজনৈতিক আত্মীয় বা ওই গোছের কেউ নয়) তারও আগে বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম। সাইনবোর্ডে কলকাতার এবং তদীয় সংস্কৃতির ঢাক তেরেকেটে তাক তাক দেখতে দেখতে ঢুকে পড়লাম বোর্ডিং পাশ জোগাড়ের লাইনপাশে! সর্পিল উন্নয়ন পেরিয়ে যখন কাউন্টারে আসীন বিপত্তারণের কাছে পৌঁছলাম, দেখি তিনি সংগত কারণেই ভারি ব্যস্ত। তাকে বিব্রত করার চেষ্টা যথাসম্ভব না করে মোলায়েম গলায় কথা বলার চেষ্টা করতেই বুঝলাম, আমার মাতৃভাষার ক্যার্দানি এখানে খাটবে না। রাষ্ট্রভাষায় (যদিও ব্যাপারটা অস্তিত্বহীন) আমার দখল উদ্বাস্তুর সামিল। কাজেই ইংরেজিই ভরসা। ব্যকরণ-কে নেহাত অকারণ জ্ঞানে ছেঁটে ফেলে তিনি আমায় যা বললেন, তা আমার যৎসামান্য বোধে কষ্টেসৃষ্টে কুলিয়ে গেল। আমি বুঝতে পারলাম বৈকুন্ঠধামের ১০৪ নম্বর দরজা আমার জন্যে বরাদ্দ হয়েছে।  বোর্ডিং কার্ডের বদান্যতায় নিরাপত্তা বলয় পার করে যখন অপেক্ষার পালা এল, প্রকৃতির ডাকে অল্পেকটু সাড়া দিয়ে একটু হাঁফ ছাড়তে পারলাম। এবার অপেক্ষার পালা, কারণ এখনও আমার সময় হয়নি। আর এই কথা আমি ছাড়াও অনেকে জানে সম্ভবত। তাই চাঁ

কবিতার অনুবাদ: কবির যাপনান্তর

ক বিতার অনুবাদ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন— "a poem cannot be translated, it can only be re-lived in a different atmosphere"। এই মন্তব্যকে যদি সত্যি বলে মেনে নিই আর সেইসঙ্গে কবি ও কবিতার যদি একটি অভেদ কল্পনা করি তাহলে যে প্রশ্নটি অনিবার্য হয়ে ওঠে তা হল, কবিতার অনুবাদ যদি অসম্ভব হয়, তার সময়োচিত সংস্কারের একমাত্র পথ যদি হয় তার যাপনান্তর, তাহলে কবির ক্ষেত্রেও কি সেই একই সূত্র প্রযোজ্য হবে? তাকেও কি সময়ের বা দেশকালের ব্যবধানে সংস্কার করে নিতে হবে প্রাসঙ্গিকতার মাপকাঠিতে? কবিতার অন্তরে কবির যতটুকু যাপন বন্দী হয়ে থাকে, সেই যাপনেরই শরিক হয়ে ওঠেন পাঠক। দেশ-কাল-সময়ের ব্যবধানে কবির সঙ্গে পাঠকের সেখানে যতটুকু ব্যবধান, সেই শূন্যস্থান পূরণেই মধ্যস্থতা করে অনুবাদ। তাই অনুবাদকে বলা চলে কবি ও কবিতার সময়োচিত সংস্কার। অতঃপর প্রশ্ন আসে, সংস্কার আসলে কী? আর কবিতা বা কবির সংস্কার আদপেই কেন প্রয়োজন? জৈমিনি সূত্রে বলা হয়েছে, "সংস্কারো নাম স ভবতি, যস্মিন। জাতে পদার্থ ভবতি যোগ্যঃ কস্যচিদ অর্থস্য।।"। এক্ষেত্রে যে যোগ্যতার প্রশ্নটি উঠে এসেছে তার ব্যাখ্যা শাস্ত্রকার কুমারিল ভট্টের মতে