চড়ুকে পিঠ (পর্ব ১) চাঁদপুর
"থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার..." বনলতা সেন একান্তই জীবনানন্দের। আর বাকি যারা, তারা না পেল জীবনের আনন্দ না পেল সবুজ ঘাসের দেশ দারুচিনি দ্বীপের ভিতর। তবু তাদেরও মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় একটা বিরাট (কোহলি নয়) এর মুখোমুখি হয়ে আড়চোখে দেখে নিতে নিজেকে। তুচ্ছ হবারও একটা আনন্দ আছে। বিজ্ঞাপনের যুগে আজ তা নিষিদ্ধ হলেও নিষিদ্ধ বস্তুর আকর্ষণ আজও একইরকম আদিম এবং দুর্নিবার।
কলকাতা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে এমনই এক নিরিবিলি আত্মদর্শনের আয়নার নাম চাঁদপুর। তাজপুর আর শংকরপুরের মাঝে এর অবস্থান। "যে জন আছে মাঝখানে" র সূত্র মেনে চাঁদপুর সেভাবে পাদপ্রদীপের আলো পায়নি আর তাই এখনও খানিকটা খাঁটি প্রকৃতি এখানে জিতে গিয়েছে মানুষের সঙ্গে লুকোচুরি খেলায়। এই আকালেও সমুদ্রসৈকতে একেবারে একা দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার আশ্চর্য অবকাশ এখনও আছে এখানে। সেই বিরাট সমুদ্রের সামনে একা দাঁড়িয়ে দেখা যায় কিভাবে জেলেদের জাল শুকোতে দেওয়ার খুঁটিগুলোর খানিকটা বিক্ষুব্ধ জলে আর বাকিটা সন্ধ্যের ঘনায়মান অন্ধকারে ডুবে যায় একটু একটু করে। বনলতা সেন লুকিয়ে থাকেন নানা ছদ্মবেশে। ঝলমলে স্ট্রীট লাইটের আলো বাঁচিয়ে পাথরের লুকোনো কোণে তার ফেলে যাওয়া রুমাল খুঁজে পাওয়া যায় সহজে। প্রতি ঢেউয়ের আঘাতে পায়ের নীচ থেকে সরে যায় বালি। বারবার জায়গাবদল না করলে পা ক্রমশ ডুবে যাবে বালি আর পাথরের গভীরে। যেন জীবনের বহমানতা এখানে খেলাচ্ছলে শিখিয়ে যায় প্রকৃতি। "বাহিরে খেলায় ডাকে সে"- যাওয়ার পথও প্রশস্ত, শুধু পা বাড়ানোর অপেক্ষা। "সব পাখি ঘরে ফেরে, সব নদী..." নদীর ফেরা হয় কি না বলে যাননি জীবনানন্দ। তবে আমাদের ফিরতে হয়। থাকা খাওয়ার সুলভ ব্যবস্থা রয়েছে কিছু সমুদ্রের অদূরেই। হোটেল মালিক যদি আপনার পক্ষাবলম্বন করেন, অবশ্যই রাত-বিরেতে দেখে আসতে পারেন আকাশ আর সমুদ্র কেমন করে ভাগ করে নেয় অন্ধকার। সাদা ঢেউগুলো যেন সেই আদিম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়- "এতদিন কোথায় ছিলেন?" সাড়া দিয়ে বসতে পারেন মুখোমুখি, আপনি আর অনন্ত বনলতা সেন।
পথনির্দেশ- কলকাতা থেকে দীঘাগামী বাসে চেপে রামনগর নামতে হবে। সেখান থেকে অটো বা গাড়িভাড়া করে সোজাসুজি চাঁদপুর।
হোটেল- A1 RESORT (9735710650) এই ব্লগের লেখক এখানে ছিলেন। আপনি অন্য কোথাও-ও থাকতে পারেন নির্দ্বিধায়।
ভ্রমণ ও লেখন- অমিতায়ু চক্রবর্তী
Comments
Post a Comment