Posts

Showing posts from 2021

কেশনগরের দুগ্গোপুজো

Image
"রূপং দেহি, ধনং দেহি, জয়ং দেহি, দ্বিষোজহি"- এই প্রার্থনা যাকে প্রতিবছর বুঝে এবং না বুঝে জানিয়ে আসছি, তিনি মহামায়া দেবী দুর্গা। দেবী বলা হয়ত ঠিক হল না, তিনি আপামর বাঙালির ঘরের মেয়ে। বহুদূরের শ্বশুরঘর থেকে মাত্র পাঁচদিনের ছুটিতে প্রতিবছর বাপের বাড়ী আসেন তিনি।  দূরে বিয়ে হয়ে চলে যাওয়া মেয়ে বৎসরান্তে বাড়ী ফিরলে তাকে নিয়ে যে যে আদিখ্যেতা করা সম্ভব বাপ-মা এর পক্ষে, তার সবেরই শাস্ত্রীয় নিদান আছে দুর্গাপুজার আচারে। সবার মঙ্গলার্থে যেদিন থেকে এই বাঙালির ব্যক্তিগত আনন্দটিকে কর্পোরেট তথা সরলার্থে বারোয়ারি করে ফেলা হয়েছে, তবে থেকেই হারিয়ে গেছে মা-মেয়ের খুনসুটিগুলো। কলকাতা থেকে নামমাত্র দূরত্বে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়-এর নামে এই উপশহরটির জন্ম ও বিকাশ। কৃষ্ণনগর বিখ্যাত তার মৃৎশিল্পের জন্যে। তাই মৃন্ময়ী যে সেখানে অপরূপা হবেন, তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন বৈষ্ণব, অথচ তার অনুরাগ ছিল মাতৃশক্তিতে। তাই শাক্তমতে প্রচলিত পূজা-পদ্ধতিতে বৈষ্ণবীয় সংশোধন করে তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেন। তবে শুধু রাজা কৃষ্ণচন্দ্রই নন, কৃষ্ণনগরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমনই আরও অ

চড়ুকে পিঠ (পর্ব ২) রাঁচি-রাজারাপ্পা

Image
 "পাগলাগারদ কোথায় আছে" তা মৌচাক ছায়াছবির এই বিখ্যাত গানটি শোনার পর সকলেই জেনে গিয়েছেন। তবে রাঁচি মানেই শুধু পাগলাগারদ নয়। রোব্বারে খাসি আর সুদূরের পিয়াসী এই দুয়ের ফারাক যদি আপনার জানা থাকে, তবে একবার ঘুরে আসতেই পারেন ঝাড়খন্ডের এই ছোট্ট শহরে। ভিজে জবজবে পশ্চিমবঙ্গীয় স্বত্ত্বা খানিকটা হলেও শুকোনো যেতে পারে এই অছিলায়। পাথুরে টিলা আর তার ফাঁক-ফোকর গলে বেরিয়ে আসা জলের ধারা, মসৃণ পাথরের আলগা প্রান্তে শ্যাওলার টিকে থাকার লড়াই আপনাকে জীবনযুদ্ধে অণুপ্রাণিত করতে পারে। যদিও স্থানীয় মানুষের মতে রাঁচি ভ্রমণের আদর্শ সময় শীতকাল, তবে এই ব্লগের লেখক আপনাকে উপদেশ দেবে বর্ষায় যেতে। সীতা, জোনহা, হুন্ড্রু জলপ্রপাতের পূর্ণ যৌবন দেখার জন্যে এর থেকে ভাল সময় হয় না। জলপ্রপাতে কৃত্রিম যে স্নানাগার আছে, তাতে জলকেলিটা অবশ্য বর্ষায় সিলেবাসের বাইরে রাখবেন নতুবা গড্ডালিকাপ্রবাহে ভেসে যাবার প্রবল সম্ভাবনা। কিন্তু পালাবার পথ নাই, যম থুড়ি পাথর আছে পিছে। স্থানীয় মানুষদের পরামর্শ মেনে নিরাপদ শীতকালকেও বেছে নিতে পারেন রাঁচিদর্শনের জন্যে তবে সেসময় জলপ্রপাতের ডায়েট করা ক্ষীণকায়া রূপে আপনার চক্ষের তথা বক্ষের তৃষ্ণা

নাট্যপ্রযোজনার একটি সমান্তরাল ধারা- 'রবিনাটকের নাট্যকথা'

  নাটকের সাহিত্যগত দিকটি বাদ দিলে যে বিরাট অংশটি পড়ে থাকে, সেটি তার প্রকৌশলগত দিক। তাতে শুধু আলো বা মঞ্চসজ্জা নয়, আলোচিত হয় অভিনয়ের রীতি, কুশীলবদের বিশেষ প্রশিক্ষণ বা অনুশীলনের দিকটিও। নাটকের জ্যঁর-কে বুঝে নিয়ে সেইমত নাটকের নির্দেশনা বা প্রযোজনার বিষয়টিও এই প্রকৌশলের অন্তর্গত। নাটকের এই দুটি দিক একদিকে যেমন একে অন্যের পরিপূরক, তেমনি আবার অন্যদিকে এই দুই অংশের বিরোধ অনেক নাটকের অভিনয়যোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে, নাট্য নির্দেশনার বহু ছকভাঙা আদলের জন্ম হয়েছে।  রবীন্দ্রনাথের নাটক সমকালীন তথা প্রচলিত নাটকের তুলনায় গোড়া থেকেই স্বতন্ত্র। এই স্বাতন্ত্র্য নাট্যকারের ইচ্ছাকৃত বলে মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ নিজের সৃষ্টির স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ব্যাপারে শুরু থেকেই যথেষ্ট যত্নবান ছিলেন। তবে এই স্বাতন্ত্র্যের মধ্যেও তার প্রথম দিকের নাটকগুলিতে বহমান সংস্কৃতির প্রতি একধরণের আনুগত্য দেখতে পাওয়া যায় যা তার পরবর্তীকালের নাটক অর্থাৎ শান্তিনিকেতন পর্বের নাটকে আশ্চর্যভাবে অনুপস্থিত। শান্তিনিকেতন পর্ব থেকেই প্রথাগত নাটকের থেকে রবীন্দ্রনাথের নাটকগুলির দূরত্ব বাড়তে থাকে। নাটকের সাধারণ মানদন্ডকে

দেশের ভাগ, নারীর বাঁটোয়ারা ও সাদাত হাসান মান্টো : অগ্নিগর্ভ দিনের “ঠান্ডি” অনুবাদ

দেশভাগ শব্দটিকে বাঙালিরা যে অর্থে বুঝতে বা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, তাতে শব্দটির আভিধানিক অর্থ এশ খানিকটা বদলে যায়। বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশভাগ চর্চা বা পার্টিশন স্টাডিজ নামক যে নব্য শাখাটির আগমন হয়েছে, তাতে মূলত দেশভাগের প্রেক্ষিত, দেশভাগ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক নথি ও সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরে দেশভাগের প্রভা তথা দেশভাগের ট্রমা নিয়ে আলোচনা হয় নানা তাত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে। বলা বাহুল্য, এই চর্চার ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। তার আগে পর্যন্ত দেশভাগ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে পন্ডিত মহল ও সাধারণ লোকমানসে একটি স্পষ্টতর পার্থক্য দেখা যেত। পন্ডিতেরা আলোচনা করেছেন সন-তারিখ-সীমানার ভিত্তিতে, কখনও বা সমকালীন রাজনীতি বা কূটনীতির দৃষ্টিকোণে, কেউ বা তাকে দেখতে চেয়েছেন বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে, অন্যদিকে সাধারণ লোকমানসে দেশভাগ শুধুই যন্ত্রণার স্মৃতিবাহী, আতঙ্কের চিহ্নস্বরূপ।  দেশভাগ তথা পার্টিশনের আলোচনায় এখন স্পষ্টতর দুটি বিভাজনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রথমটি হল পাঞ্জাব পার্টিশন ও দ্বিতীয়টি হল বেঙ্গল পার্টিশন। এ বিষয়ে চর্চাকারীমাত্রেই জানেন যে পাঞ্জাব পার্টিশন যতখানি well documented, বেঙ্গল পার্

চড়ুকে পিঠ (পর্ব ১) চাঁদপুর

Image
"থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার..." বনলতা সেন একান্তই জীবনানন্দের। আর বাকি যারা, তারা না পেল জীবনের আনন্দ না পেল সবুজ ঘাসের দেশ দারুচিনি দ্বীপের ভিতর। তবু তাদেরও মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় একটা বিরাট (কোহলি নয়) এর মুখোমুখি হয়ে আড়চোখে দেখে নিতে নিজেকে। তুচ্ছ হবারও একটা আনন্দ আছে। বিজ্ঞাপনের যুগে আজ তা নিষিদ্ধ হলেও নিষিদ্ধ বস্তুর আকর্ষণ আজও একইরকম আদিম এবং দুর্নিবার।  কলকাতা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে এমনই এক নিরিবিলি আত্মদর্শনের আয়নার নাম চাঁদপুর। তাজপুর আর শংকরপুরের মাঝে এর অবস্থান। "যে জন আছে মাঝখানে" র সূত্র মেনে চাঁদপুর সেভাবে পাদপ্রদীপের আলো পায়নি আর তাই এখনও খানিকটা খাঁটি প্রকৃতি এখানে জিতে গিয়েছে মানুষের সঙ্গে লুকোচুরি খেলায়। এই আকালেও সমুদ্রসৈকতে একেবারে একা দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার আশ্চর্য অবকাশ এখনও আছে এখানে। সেই বিরাট সমুদ্রের সামনে একা দাঁড়িয়ে দেখা যায় কিভাবে জেলেদের জাল শুকোতে দেওয়ার খুঁটিগুলোর খানিকটা বিক্ষুব্ধ জলে আর বাকিটা সন্ধ্যের ঘনায়মান অন্ধকারে ডুবে যায় একটু একটু করে। বনলতা সেন লুকিয়ে থাকেন নানা ছদ্মবেশে। ঝলমলে স্ট্রীট লাইটের আলো বাঁচিয়ে পাথরে